তেল রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা প্রায় প্রতিটি বাঙালি খাবারে ব্যবহৃত হয়। তবে অনেক সময় আমরা রান্নার পর অবশিষ্ট থাকা তেল পরে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করি। কিন্তু এটি কি স্বাস্থ্যকর?
একাধিকবার গরম করা তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি অ্যাসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া, স্ট্রোক, হৃদরোগ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় তেল বারবার গরম করলে এতে ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে অবশিষ্ট তেলের পুনর্ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।
১) বিষাক্ত যৌগের সৃষ্টি: তেল একাধিকবার গরম করলে এতে বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে বাজে গন্ধ হতে পারে এবং HNE নামক উপাদান উৎপন্ন হয়, যা কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দিতে পারে ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
২) পুষ্টিগুণের ক্ষতি: পোড়া তেলে পূর্বের রান্নার কিছু অংশ থেকে যায়, যা রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায় এবং খাবারের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট করে।
৩) হজমজনিত সমস্যা: পুরনো তেল ব্যবহারের ফলে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া হতে পারে। দীর্ঘদিন এই অভ্যাস বজায় থাকলে লিভারের সমস্যা ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৪) ট্রান্স ফ্যাটের বৃদ্ধি: বারবার গরম করা তেলে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
৫) ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রভাব: ব্যবহৃত তেলে ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হয়, যা শরীরের কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
যদিও ব্যবহৃত তেল পুনর্ব্যবহার না করাই ভালো, তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে:
১) ভাজা খাবারের পর অবশিষ্ট তেল ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিতে হবে এবং এয়ারটাইট বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে যেন এতে খাদ্যকণা না থাকে।
২) ব্যবহারের আগে তেলের রঙ ও তরলভাব পরীক্ষা করতে হবে। যদি তেল ঘন ও আঠালো হয়ে যায় বা রঙ পরিবর্তিত হয়, তবে তা ব্যবহার না করাই ভালো।
৩) ডুবো তেলে ভাজা খাবারের তেল পুনরায় ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে এটি রান্নার কাজে সীমিতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাদ্য শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবারণের উপকরণ নয়, এটি শরীরের জ্বালানি। তাই রান্নার প্রতিটি উপাদান সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। বারবার গরম করা তেল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিল রোগের কারণ হতে পারে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর রান্নার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।