আদার উৎপত্তি ধারণা করা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ বছর আগেই ভারত ও চীনে আদা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হত। প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরাও খাবারের স্বাদ বাড়াতে এবং পেটের সমস্যা দূর করতে আদা ব্যবহার করতো।
আজকের দিনে প্রায় সব দেশেই আদা রান্না, পানীয় এবং ভেষজ ওষুধে ব্যবহৃত হয়।
আদার পুষ্টিগুণ
আদায় প্রচুর ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
১০০ গ্রাম আদায় পাওয়া যায়:
- ভিটামিন C
- ভিটামিন B6
- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম
- ফাইবার
- জিঞ্জারল (gingerol) – যা আদার প্রধান ঔষধি উপাদান
আদার উপকারিতা
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- আদা গ্যাস্ট্রিক জুস নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়। বদহজম, গ্যাস ও ফাঁপা কমাতে এটি কার্যকর।
- সর্দি-কাশি ও ফ্লু প্রতিরোধে সহায়ক
- আদা শরীরকে উষ্ণ রাখে। গরম আদা চা কাশি, গলা ব্যথা ও ঠান্ডা কমাতে সাহায্য করে।
- বমি বমি ভাব দূর করে
- গর্ভবতী মা বা ভ্রমণকারীদের জন্য আদা প্রাকৃতিক সমাধান। মোশন সিকনেস কমাতে আদা কার্যকর প্রমাণিত।
- প্রদাহ কমায়
- আদার জিঞ্জারল উপাদান শরীরের প্রদাহ ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য আদা উপকারী।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে
- আদা রক্ত পাতলা করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
- রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- গবেষণায় দেখা গেছে, আদা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আদা শরীরকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- আদা বিপাকক্রিয়া (Metabolism) বাড়ায় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে।
আদার অপকারিতা
১. অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক ও অম্বল বাড়তে পারে
যাদের পেটের আলসার বা অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আছে, তারা বেশি আদা খেলেই অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন।
২. রক্তক্ষরণের ঝুঁকি
আদা রক্ত পাতলা করে, তাই যারা ব্লাড থিনার (যেমন Aspirin, Warfarin) ওষুধ খান, তাদের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৩. প্রেগন্যান্সিতে সতর্কতা
অল্প পরিমাণ আদা বমি ভাব কমায়, কিন্তু অতিরিক্ত আদা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৪. লো ব্লাড সুগার বা প্রেসার রোগীদের জন্য ঝুঁকি
আদা ব্লাড সুগার ও প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের ব্লাড সুগার বা প্রেসার আগে থেকেই কম, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেশি আদা খাবেন না।
৫. অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আদা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে – যেমন চুলকানি, ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি ইত্যাদি।
আদা খাওয়ার উপায়
- আদা চা: ঠান্ডা ও কাশির জন্য আদা চা সবচেয়ে জনপ্রিয়।
- রান্নায় মসলা: তরকারি, মাংস বা ভাজায় অল্প আদা দিলে স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুটোই ভালো হয়।
- আদা-মধু: সর্দি-কাশি কমাতে আদা ও মধুর মিশ্রণ দারুণ কাজ করে।
- আদার রস: সকালে খালি পেটে সামান্য আদার রস খেলে হজম ভালো হয়।
- আচার ও স্মুদি: কিছু দেশে আদা আচার বা স্মুদিতেও ব্যবহৃত হয়।
প্রতিদিন কতটা আদা খাওয়া নিরাপদ?
- সাধারণত দিনে ২–৪ গ্রাম আদা খাওয়া নিরাপদ।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য দিনে সর্বোচ্চ ১ গ্রাম পরিমাণ আদা যথেষ্ট।
- শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেশি আদা খাওয়ানো উচিত নয়।